ভাষা আন্দোলন জাদুঘর
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব পাশে ৪টি কক্ষ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন জাদুঘর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন জাদুঘর উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, প্রেক্ষাপট, ঘটনাবলি সম্পর্কে বিভিন্ন লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদ, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক পুস্তিকার প্রচ্ছদ, ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বিভিন্ন রচনার অংশবিশেষ, ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, তৎকালীন প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার ভাষা আন্দোলন বিষয়ক প্রতিবেদন। এছাড়াও রয়েছে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম রচিত ‘নূরনামা’র পঙ্ক্তিমালা, বাংলা ভাষার ওপর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও অতুল প্রসাদ সেনের কবিতা, ১৯৫৬ সালে হামিদুর রহমান প্রণীত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের আদি নকশা, বর্তমান শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দৃশ্য, মাতৃভাষার সপক্ষে প্রথম প্রস্তাবক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোকচিত্র, তৎকালীন প্রকাশিত পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে সংগ্রামী ছাত্রছাত্রীদের ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রস্তুতি, শিক্ষার্থীদের মিছিল, ধর্মঘট চলাকালে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত ছাত্রনেতা শওকত আলীকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ছবি, ইডেন কলেজের মেয়েদের তৈরি শহিদ মিনারসহ আরও নানা দুর্লভ আলোকচিত্র। একটি কক্ষে রয়েছে ভাষাশহিদ শফিউর রহমানের ব্যবহৃত কোট এবং তাঁর পারিবারিক কিছু আলোকচিত্র, শহিদ আবুল বরকতের প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার সনদ, একুশে পদক প্রাপ্তির সনদ ইত্যাদি। আরও রয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালি মুসলিমদের দ্বন্দ্বের ইতিহাস। রয়েছে মাহবুবুল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতার হস্তলিখিত কপি, ১৯৫২ সালে ২৬শে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের হস্তলিখিত কবিতা ‘স্মৃতি স্তম্ভ’ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা প্রথম গান।
ভাষা আন্দোলন জাদুঘর সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১১.০০ হতে দুপুর ১.০০ পর্যন্ত এবং দুপুর ২.৩০ থেকে ৪.০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের নিচতলায় স্থাপিত জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘরটি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন। এখানে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্রমবিকাশের ইতিহাস ও নিদর্শন, বিখ্যাত লেখক ও কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিকৃতি এবং তাঁদের ব্যবহৃত জিনিস, হাতের লেখা, বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মীর মশাররফ হোসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লালন শাহ, হাসন রাজা, জসীমউদ্দীন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল প্রমুখ মনীষীর প্রতিকৃতি এবং তাঁদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও বিভিন্ন নিদর্শন।
জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১১.০০ হতে দুপুর ১.০০ পর্যন্ত এবং দুপুর ২.৩০ থেকে ৪.০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
লোকঐতিহ্য জাদুঘর
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের ৩য় তলার পশ্চিম পাশে অবস্থিত লোকঐতিহ্য জাদুঘর। বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর ফোকলোরের উপাদান সংগ্রহের দিকে যেমন নজর দেওয়া হয়েছিল তেমনি লোকশিল্প সংগ্রহ করার প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে পুরোনো প্রেস ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে লোকঐতিহ্য সংগ্রহশালা নামে সেগুলো প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়। দেশি-বিদেশি ফোকলোর তথা লোকশিল্প-গবেষক বা আগ্রহী ব্যক্তিরা নানা সময়ে এই সংগ্রহশালা থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীকালে এরই সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে লোকঐতিহ্য সংগ্রহশালার উন্নয়ন ঘটিয়ে লোকঐতিহ্য জাদুঘর নামে বর্ধমান হাউসে স্থানান্তর করা হয়। অর্থ বিভাগের অনুমোদনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১৪-১৭ অর্থবছরে ‘বর্ধমান হাউসে লোকঐতিহ্য জাদুঘর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ কর্মসূচি নামে লোকঐতিহ্য জাদুঘরটি পূর্ণাঙ্গরূপে স্থাপন করা হয়। লোকঐতিহ্য জাদুঘর বিষয়ভিত্তিক (thematic) জাদুঘর হিসেবে বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির সৃষ্টিশীলতাকে উপস্থাপন করে। এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে জাদুঘরে যেসব উপাদান প্রদর্শিত, সেসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি তথা লোকঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক নিদর্শনাদি আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পাবে। এই জাদুঘরে রয়েছে লোকজীবনে ব্যবহৃত লোকশিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাজির পট, শতরঞ্জি, রিকশা পেইন্টিং, নকশিকাঁথা, জামদানি, লোকঅলংকার, বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতি। এছাড়া কাঠ, মাটি, ধাতু, শোলা ইত্যাদি উপকরণে তৈরি বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীসহ প্রায় ৫০০টি উপাদান জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। বিশেষায়িত এই জাদুঘরটি পরিদর্শনের জন্য লোকশিল্প গবেষক, ফোকলোর বিশেষজ্ঞ ও অনুরাগীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়।
ড. তপন কুমার বাগচী
পরিচালক (চলতি দায়িত্ব)
ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগ