Wellcome to National Portal
বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভাগের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

 

গ্রন্থাগার বিভাগের ঐতিহাসিক পটভূমি: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরই পূর্ব বাংলায় শুরু হয় বাঙালি জাতিসত্তা ও মাতৃভাষার অধিকারের ওপর আক্রমন। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় এই আন্দোলন ১৯৫২ সালে ছাত্রজনতার আত্মবলিদানের মাধ্যমে ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের সূচনা করে এবং ধর্মভিত্তিক স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের নিগঢ় থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালি তার ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও নিজস্ব জাতিসত্তা ভিত্তিক একটি স্যেকুলার রাষ্ট্র গঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শুরু হয়। এই লক্ষ্যে ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গঠিত রাজনৈতিক মোর্চা ‘যুক্তফ্রন্ট-এর ২১ দফা নির্বাচনী ইশতিহারের ১৬ নং ধারায় বলা হয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা, উন্নয়ন প্রচার এবং প্রসারের জন্য একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কথা। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে এবং ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার হিসেবে বাংলা একাডেমি তার যাত্রা শুরু করে। বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠালগ্নে চারটি বিভাগ (গ্রন্থাগার ব্যতিত) নিয়ে কাজ শুরু করলেও ১৯৫৭ সালের ১৮ই মে অনুষ্ঠিত ১০ম সভায় আয়োজক সমিতি বিভাগসমূহের পুনর্বিন্যাস করে ৬টি বিভাগ গঠন করেন। পুনর্গঠিত বিভাগগুলো ছিলো নিম্নরূপ: ১. গবেষণা বিভাগ; ২. অনুবাদ বিভাগ; ৩. সংকলন বিভাগ; ৪. প্রকাশন ও বিক্রয় বিভাগ; ৪. সংস্কৃতি বিভাগ; এবং ৬. গ্রন্থাগার বিভাগ। ১০ আগস্ট ১৯৫৭ তারিখে উক্ত আইন বলবৎ হয়। তবে গঠনের পরপরই পুনর্বিন্যাসকৃত বিভাগসমূহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি। যেমন গ্রন্থাগার বিভাগ ১৯৫৮ সালের জানুয়ারিতে বর্ধমান ভবনের নিচতলায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

 

গ্রন্থাগারটির গ্রন্থ-সংগ্রহ প্রক্রিয়া: বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারটিকে ‘বিশেষ গ্রন্থাগার (স্পেশাল লাইব্রেরি) হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এটি সকলের ব্যবহারের জন্য নয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য একাডেমির সদস্য, সহযোগী ছাত্র-সদস্য, বিদ্বান ও গবেষকগণের অধ্যয়ন ও গবেষণায় সাহায্য করা। এ লক্ষ্যে বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ের বহু গ্রন্থ এখানে সৌজন্য হিসেবে দান করেছেন। দুষ্প্রাপ্য পুস্তক-পত্রিকা ও পান্ডুলিপি প্রভৃতি থেকে গবেষণার উপাদান সংগ্রহ করাই ছিল এটির মূখ্য উদ্দেশ্য। গ্রন্থাগারটিতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ৬ হাজারের মতো বই ছিল। এর মধ্যে ক্রয়কৃত প্রায় সাড়ে তিন হাজার, ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৮১টি, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাওয়া  ছ’শ’র মতো গ্রন্থ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার) এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক যেমন: জাহানারা ইমাম, মহাদেব সাহা, মাহবুব তালুকদার, কবি আতোয়ার রহমান, আবু জাফর, খান বাহাদুর, আব্দুল হাকিম, ড. আহমদ শরীফ প্রমুখ ব্যক্তিদের কাছ থেকে কয়েক হাজার বই পাওয়া যায়। বইগুলোকে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটির মাধ্যমে মানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য পুস্তকসমূহ যাচাই বাছাই করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের তৃতীয় তলায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।

 

গ্রন্থাগারের বর্তমান অবস্থা: বর্ধমান ভবন থেকে বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারটি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে সংযোজিত বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৯,৩৯৫ টি। তন্মেধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ২,৭১১ টি বই সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারের পত্রিকা শাখায় ১৬টি জাতীয় দৈনিক এবং ক্রয়কৃত ও সৌজন্য কপি হিসেবে প্রাপ্ত সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাহিত্য পত্রিকাসহ মোট ২০টি সাময়িকী সংরক্ষিত রয়েছে। উল্লিখিত অর্থবছরে ১,৫০৯ জন পাঠক ও গবেষককে সেবা প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু গ্রন্থাগার বিভাগের উল্লেখযোগ্য আরেকটি কাজ হলো বাংলা একাডেমির বিভিন্ন বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহের আইএসবিএন (ওঝইঘ) নম্বর সরবরাহ, প্রদান এবং সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা এখান থেকেই গ্রহণ করা হয়।

 

গ্রন্থাগারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারটিকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ‘অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশন শীর্ষক প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবীসহ দেশের সকল শ্রেণীর পাঠক গ্রন্থাগারের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এর ফলে গ্রন্থাগারে দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, গবেষক, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও গুণীজনের বই-পাঠ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং গবেষণা বৃদ্ধি পাবে; এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এতে বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি বাংলা একাডেমির মূল উদ্দেশ্য ‘বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার’ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।