১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২০/৪ঠা ফাল্গুন ১৪২৬ সোমবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৬-তম দিন। মেলা চলে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১৩৫টি।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং ড. কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
প্রাবন্ধিক বলেন, সামগ্রিকভাবে এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক দর্শন, শিক্ষা ভাবনা, দ্বিতীয় বিপ্লব, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর আত্মদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নানা দিক সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে লেখক নিজস্ব ভঙ্গিতে, নতুন বিশ্লেষণে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ফলে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনাদিকাল ধরে এই ভাষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল ধরনের বৈষম্য, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতাকে ঐক্যবদ্ধ হবার প্রণোদনা জোগাবে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ যেমন উদ্দীপনাময় তেমনি এর ছিল সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য- পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয়। নাতিদীর্ঘ অথচ কালোত্তীর্ণ এ ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। কাব্যিক ব্যাঞ্জনাময় এ ভাষণে মানুষের অধিকার আদায়ের কথা, মানবতার কথা উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ হলো সে বিষয়টি অনুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এ গ্রন্থে।
গ্রন্থের লেখক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়েছে বাঙালির হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ সমগ্রবিশ্বের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দেয় তা হলো-কোনো জাতির মুক্তি আকাক্সক্ষাকে অস্ত্র দিয়ে দমন করা যায় না। আমরা বলতে পারি ৭ই মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণই বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওপর লিখিত অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের প্রতিটি গ্রন্থই অনবদ্য এবং পরিশ্রমের স্বাক্ষরবাহী। আজকের আলোচ্য গ্রন্থেও লেখক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন। এ গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়াবে তেমনি গবেষকদের জন্য বঙ্গবন্ধুচর্চার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসলাম সানী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং আহম্মেদ শরীফ।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুজিবুল হক কবীর, আয়শা ঝর্না, চঞ্চল আশরাফ এবং মাজুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান, তিতাস রোজারিও এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। আজ ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন আলম দেওয়ান, মোক্তার হোসেন, রহিমা খাতুন, শারমিন সুলতানা এবং মো. মাহাবুল ইসলাম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), মো. হাসান মিয়া, (বাংলা ঢোল), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড) এবং মোঃ খোকন (বাঁশি)।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/৫ ফাল্গুন ১৪২৬ মঙ্গলবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাহিদুল হক এবং জাফর ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সম্পদ বড়ুয়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গ্রন্থমেলা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন
আগামীকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/৫ ফাল্গুন ১৪২৫ মঙ্গলবার। সন্ধ্যা ৬:০০টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ