আজ ১১ চৈত্র ১৪২৭/২৫ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর ৮ম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩:০০টায়। মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ১১৭টি। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের গণহত্যা ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বদেশ রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক), আহম্মেদ শরীফ এবং চৌধুরী শহীদ কাদের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার চরিত্র বিচার করলে দেখা যায় উদ্দেশ্য ও সংখ্যা দুটোর বিচারেই বাংলাদেশের গণহত্যা অনেক বড়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্যই ছিল, একটি নরগোষ্ঠী ও তারা যে স্বাধীনতার চেতনায় এক হয়েছে, এই দুটোকেই ধ্বংস করা। হত্যাকারীদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশনা ছিল, প্রথমে হত্যা করতে হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের, এরপরে ছাত্রসহ আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে বাঙালিদের চেতনার বাতিঘর বুদ্ধিজীবীদের। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চের রাত থেকেই সেটা শুরু করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের গণহত্যায় বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীদের ওই হত্যাকা-ের পরে আর যে হত্যা ও নির্যাতন ঘটে, তা হলো হিন্দুধর্মাবলম্বীদের হত্যা ও তাদের দেশত্যাগ বাধ্য করা। বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি যেমন কাজ করছে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশও একটি বড় বিষয়।
আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর মানব ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের যে ভাষ্য তৈরি করা হয় সেখানে গণহত্যার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস যেমন প্রয়োজন, তেমনি গণহত্যার ইতিহাসকেও সামনে তুলে ধরতে হবে। ১৯৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য জাতীয় ঐকমত্য একান্ত জরুরি। সেই সঙ্গে, গণহত্যা বিষয়ে নিবিড় বিদ্যায়তনিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমে সেসব গবেষণার ফল তুলে ধরতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে গণহত্যার প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, শাসকগণ গণহত্যার জন্য তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মাণ করে আর এই কাঠামোর ভেতরেই গণহত্যা সংঘটিত করে। অপরাজনীতি চেষ্টা করে মানুষের মন থেকে গণহত্যার স্মৃতি মুছে দেবার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংসতম গণহত্যার ইতিহাস আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা যদি ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরতে পারি তাহলে বিশ্বজনতার মানস-জগতে গণহত্যার ইতিহাস স্থায়ী রূপ পাবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন সরকার মাসুদ, কাজী রাফি ও আহম্মেদ শরীফ।
আগামীকাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ১২ চৈত্র ১৪২৭/২৬ মার্চ ২০২১ শুক্রবার। আগামীকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২১; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সকাল ৮:০০টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের অভিযাত্রা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাহরিয়ার কবির এবং মোহাম্মদ হান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
আগামীকাল অমর একুশে বইমেলার ৯ম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ