Wellcome to National Portal
বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’র শুভ উদ্বোধন


প্রকাশন তারিখ : 2019-02-01

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’র শুভ উদ্বোধন

আজ ১৯ মাঘ ১৪২৫/১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার শুভ উদ্বোধন হলো মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল ৩:০০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা-এর শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশন করা হয়।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ (ভারত) এবং প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি (মিশর)। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে হাক্কানী পাবলিশার্স প্রকাশিত SECRET DOCUMENTS OF INTELLIGENCE BRANCH ON FATHER OF THE NATION BANGABANDHU SHEKH MUJIBUR RAHMAN (VOLUME-2, 1951-1952)-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোহসেন আল-আরিশি আরবিতে লেখা শেখ হাসিনার জীবনীগ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ-শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও মহাপরিচালক।

স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের গ্রন্থমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বিজয়’ : ১৯৫২-৭১ নবপর্যায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পূর্তি অর্থাৎ জাতীয় জীবনের সমস্ত বিজয়ী মুহূর্তকে এবারের গ্রন্থমেলার মর্মমূলে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছি আমরা।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি বলেন, একুশের গ্রন্থমেলা জাতির সৃজনশীল সত্তার পরিচয়বহ।

সম্মানিত বিদেশি অতিথির বক্তব্যে বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। পনের বছর বয়সে এ দেশ ছেড়ে গেলেও বাকি বাহাত্তর বছর ধরে এ অনন্য দেশের স্মৃতিই বহন করে চলেছি। তিনি বলেন, ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যের নোবেলপ্রাপ্তি, ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯৯-এ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিলাভ বাংলাভাষী মানুষের স্বপ্নকে দিয়েছে বিশ্বজনীনতা।

অপর সম্মানিত অতিথি মিশরের লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি বলেন, এ গ্রন্থমেলা উগ্রতা এবং অন্ধতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের লড়াইয়ের প্রতীক। যে লড়াইয়ের প্রতীক বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাও। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত নির্মাণে শেখ হাসিনা যেভাবে লড়াই করছেন, তাঁর সে লড়াইয়ে সারাবিশ্বের গ্রন্থপ্রেমী সকল উদার মানুষের সমর্থন রয়েছে।

প্রকাশক প্রতিনিধি ফরিদ আহমদে বলেন, একুশের গ্রন্থমেলার পাশাপাশি দু’বছর অন্তর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলা আয়োজন এখন সময়ের দাবি।

বিশেষ অতিথি কে এম খালিদ এমপি বলেন, এবারের একুশে গ্রন্থমেলা মননসমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক জাতিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সভাপতিত্ব ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন এক জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। মুদ্রিত বই নিয়ে মাসব্যাপী এই উৎসবের ব্যাপ্তি প্রমাণ করে প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একুশের মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা প্রমাণ করে ডিজিটাল লাইব্রেরি কোনোভাবেই মুদ্রিত বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। আমরা প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েও নতুন বইয়ের নতুন পাতার ঘ্রাণ আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে নানা সংগ্রামের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই এক বিস্ময়ের ব্যাপার। একুশের চেতনাও এখন আর বাংলাদেশের সীমানায় আটকে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে এবং প্রবাসী বাঙালির প্রচেষ্টায় আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তিনি বলেন, সামনের কয়েকটি বছর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং অমর একুশের সত্তর বছর পূর্তিÑ এই তিন মহান মুহূর্তকে সামনে রেখে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অশিক্ষা-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতা- কাজী রোজী, কথাসাহিত্য- মোহিত কামাল, গবেষণা- সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা- আফসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে দুইলক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী গ্রন্থমেলা পরিদর্শন করবেন। 
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রামেন্দু মজুমদার, নুরুন্নাহার খানম এবং ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি : 
আগামীকাল ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৯/২০মাঘ ১৪২৫ শনিবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন। মেলা চলবে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।

বিকেল ৪:০০টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় : ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন লেখক-সাংবাদিক হারুন হাবীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী এবং গবেষক মোফাকখারুল ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


অপরেশ কুমার ব্যানার্জী 
পরিচালক 
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ