আজ ৫ই ফাল্গুন ১৪২৮/১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার। অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বইমেলায় আজ নতুন বই এসেছে ১৭৭টি।
প্রথম পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠান বিকেল ৩:০০টা বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বজিত সাহা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইকবাল হাসান, তাজুল ইমাম এবং ইউসুফ রেজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতিসংঘের সামনে একুশ উদ্যাপন শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রাবন্ধিক বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার শেকড়ের অনুপ্রেরণার দিন। এই দিনটি ঐতিহ্যের পরিচয়কে দৃঢ় করেছে। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আজ সেটি সকল ভাষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কানাডাপ্রবাসী বাঙালি রফিক ও সালামের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় দ্রুত ইউনেস্কো কতৃর্ক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালির বিশাল অহঙ্কারের বিষয়।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের বাইরে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনাসমৃদ্ধ একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপন করাই নয়, প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়কে এই উদ্যাপনে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বজুড়ে যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে তা দ্বারা শুধু বাঙালিরাই উপকৃত হয়নি, বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষই ভাষার অধিকার রক্ষায় সুদৃঢ় ভিত্তি পেয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে অসীম কুমার দে বলেন, বাঙালির মাতৃভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেবার ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহীদ রেজা নূর এবং শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমিনুর রহমান সুলতান এবং প্রশান্ত মৃধা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।
বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জাহীদ রেজা নূর বলেন, একটি রক্তাক্ত জনযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই জনযুদ্ধের একটি সাহিত্যিক মাত্রা আছে যাকে যথার্থ অনুধাবন করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সাহিত্যিক ভূগোল বিনির্মাণ সম্ভব নয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে শহীদ ইকবাল বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন মানেই এদেশের আপামর জনতার সার্বিক মুক্তির সংগ্রামকে ধারণ এবং বেগবান করা।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও এর প্রভাবে সৃষ্ট সংস্কৃতি ও সাহিত্যেও নানা পরিবর্তন ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনকে উপজীব্য করেই রচিত হয়েছে শিল্পমানসম্মত নানা কবিতা, নাটক ও উপন্যাস। এদেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিপুলভাবে অভিষিক্ত এবং এখনও সংগ্রামরত।
সভাপতির বক্তব্যে ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নানাভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। পরিবর্তন ও প্রগতির হাত ধরে এই চেতনা সামনের দিকে অগ্রসর হবেÑ এই আশাবাদ আমরা রাখতেই পারি।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আসলাম সানী এবং সাধনা আহমেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, হারিসুল হক, ওবায়েদ আকাশ এবং রনজু রাইম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, বেলায়েত হোসেন এবং রেজিনা ওয়ালী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন জাহান বশিরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিশ্বভরা প্রাণ’—এর শিল্পীবৃন্দ।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ৬ই ফাল্গুন ১৪২৮/১৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার পঞ্চম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকেল ৩:০০টা বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : উন্নয়নের নারী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফওজিয়া মোসলেন এবং তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাছিমা বেগম এনডিসি।
মোহাম্মদ আকবর হোসেন
উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)