বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হয় সাইমন জাকারিয়া রচিত সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেন নাসির আহমেদ এবং স্বকৃত নোমান। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মন ও মানসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সমভাবে সবার জন্য আন্তরিকভাবে ভালোবাসা পোষণ করতেন। অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সাহিত্যচর্চা ও রচনাকর্মে বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং ভাবাবেগ ও ভক্তিবাদ সে তথ্যকেই প্রমাণিত করে। মূলত নিভৃতচারী সাধকের মন ও মননকে কর্মগুণেই শেখ মুজিব ছুঁয়ে যেতে পেরেছেন। যে সাধু-গুরু-বাউল-ফকির-কবিয়ালদের নিগূঢ়তত্ত্ব ও দেহবাদী আচারে-ক্রিয়ায় জীবন যাপনের কথা, তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ সমাজের অগ্রসর শ্রেণির তুলনায় কোনোভাবেই কম ছিল না, তার প্রমাণ সাইমন জাকারিয়ার বইয়ে পরতে পরতে মেলে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, লোকায়ত বাংলার লোককবি ও সাধকদের সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরব উপস্থিতির অত্যন্ত তথ্যমূলক ও বিশ্লেষণধর্মী পাঠ এ গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধু বাংলার সংস্কৃতি, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছেন। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল, সাধক ও কবিগণ বাংলার সংস্কৃতিকে যেমন অন্তরে ধারণ এবং চর্চা করেন তেমনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও তারা মহিমান্বিত করেছেন তাদের পুথি, সংগীত ও লোককর্মের মাধ্যমে। লোকসাহিত্যে জাতির পিতাকে নিয়ে যত গ্রন্থ ও গবেষণা হয়েছে তার মধ্যে সাইমন জাকারিয়ার এ গ্রন্থটি পথিকৃৎ হয়ে থাকবে।
গ্রন্থের লেখক বলেন, এদেশের অবহেলিত বিস্মিত লোকসাধক ও কবিগণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে ছিলেন সদাসচেতন। এসব সাধক কবিদের পরিচিতিতেই বিশ্বের কাছে বাংলা সংস্কৃতি আজ মর্যাদার আসন পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বাংলার লোক সংস্কৃতি ও লোক সাধকদের আপন করে নিয়েছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলার লোকসাধকদের নির্মল ও নিঃস্বার্থ ভাষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র জীবন উঠে এসেছে। সাধক কবিগণ বাংলার বৃহত্তর লোকসমাজের প্রতিনিধি। ইতিহাসের নিরপেক্ষতা বিচারে এসব
সাধক-কবিদের সাক্ষ্য আমাদের জন্য অপরিহার্য।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইকবাল হাসান, ফেরদৌস নাহার, আশরাফ আহমেদ এবং জাকির জাফরান।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মাহমুদ আল জামান, ইকবাল হাসান, আশরাফ আহমেদ, জাফর আহমদ রাশেদ, ফারুক আহমেদ এবং রাসেল রায়হান। সন্ধ্যায় ছিল শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’ এবং শাহ্ সাদিয়া আফরিন মল্লিকের পরিচালনায় ‘হামিবা সাংস্কৃতি একাডেমী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, প্রমোদ দত্ত এবং আবিদা রহমান সেতু। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)।
ভারতীয় হাইকমিশনারের গ্রন্থমেলা পরিদর্শন
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ আজ বিকেল ৪:০০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিদর্শন করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী তাঁকে গ্রন্থমেলায় স্বাগত জানান এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ উপহার দেন।
আগামীকালের অনুষ্ঠান :
আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০/১২ ফাল্গুন ১৪২৬ মঙ্গলবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪-তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হবে সমীর কুমার বিশ্বাস রচিত বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সেলিম জাহান। আলোচনায় অংশ নেবেন রাজু আলাউদ্দিন, তপন বাগচী এবং এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ