আজ ২রা ফাল্গুন ১৪২৮/১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার শুভ উদ্বোধন হলো ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’। বিকেল ৩:০০টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা-এর শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
স্বাগত ভাষণে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, অর্ধশতাব্দী আগে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একুশের অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেছিলেন। আজ তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার শুভ উদ্বোধন করছেনÑ এটা আমাদের জন্য পরম আনন্দের বিষয়। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার একটি স্থায়ী কাঠামো এবং বইমেলা কার্যালয় অতি প্রয়োজন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মোঃ আবুল মনসুর বলেন, এবারের বইমেলা মহামারির বৈরি পরিস্থিতিতে শুরু হলেও আশা করা যায় সকলের প্রচেষ্টায় তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সফল হবে।
প্রকাশক প্রতিনিধি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।
বিশেষ অতিথি কে এম খালিদ এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা এবং আন্তরিকতায় একটু বিলম্বে হলেও এবারের একুশের বইমেলা আজ শুরু হচ্ছে। আমরা আশা করি সংস্কৃতি-ক্ষেত্রে সরকারের অব্যাহত প্রণোদনায় বইমেলাসহ সকল জ্ঞানভিত্তিক কর্মকা- নতুন প্রজন্মকে মননশীল করে গড়ে তুলবে।
সভাপতির ভাষণে সেলিনা হোসেন বলেন, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকায়ন সম্ভব করেছেন তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে বাঙালিকে বিশ্ব দরবারে নতুন সাংস্কৃতিক উচ্চতায় উন্নীত করেছে।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক করোনা মহামারির কারণে গতবছর এবং এ বছর অমর একুশে বইমেলা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা করোনা এবং অন্যান্য অসুস্থাতায় বাংলা একাডেমির তিনজন সভাপতিÑ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে হারিয়েছি। তাঁদের সবাইকে আমরা যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি তেমনি একুশে বইমেলায় আগত সবাইকে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে অনুরোধ করি। তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা যেমন জরুরি তেমনি অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ব-পরিসরে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উন্নত চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা অতি প্রয়োজন। প্রধান অতিথি বলেন, প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশে মুদ্রিত বইয়ের বিকল্প আবিষ্কৃত হলেও ছাপা বইয়ের আবেদন কখনও ফুরোবার নয়। এজন্যই অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছরের মাহেন্দ্রক্ষণে অমর একুশে বইমেলা ২০২২ প্রাণপূর্ণ এবং পাঠকপ্রিয় হবে বলে আমরা আশা করি।
বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হয়।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতা-আসাদ মান্নান ও বিমল গুহ, কথাসাহিত্য-ঝর্না রহমান ও বিশ্বজিৎ চৌধুরী, প্রবন্ধ/গবেষণা-হোসেনউদ্দীন হোসেন, অনুবাদ-আমিনুর রহমান ও রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, নাটক-সাধনা আহমেদ, শিশুসাহিত্য-রফিকুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা-পান্না কায়সার, বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গবেষণাÑহারুন-অর-রশিদ, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান-শুভাগত চৌধুরী, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী-সুফিয়া খাতুন ও হায়দার আকবর খান রনো, ফোকলোরÑআমিনুর রহমান সুলতান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং অনুপস্থিত তিনজন লেখকের প্রতিনিধির হাতে তিন লক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নূরুন্নাহার খানম এবং ড. শাহাদাৎ হোসেন।
মোহাম্মদ আকবর হোসেন
উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)
জনসংযোগ উপবিভাগ