আজ ১২ চৈত্র ১৪২৭/২৬ মার্চ ২০২১ শুক্রবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২১; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সকাল ৮:০০টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের অভিযাত্রা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহরিয়ার কবির এবং মোহাম্মদ হান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, পঞ্চাশ বছরের এক গর্বিত পরিক্রমার নাম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ এই পরিক্রমার রক্তাক্ত ভিত্তিভূমি, বঙ্গবন্ধু এর মহান কা-ারি। মুক্তিযুদ্ধ কোনো আকস্মিকতার ফল নয় বরং ইতিহাসের এক অনিবার্য ধারাবাহিকতার নাম। হাজার বছরের বিদ্রোহী ও সংগ্রামী পরম্পরায় আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন করেছি।
প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে স্বাভাবিকভাবে আমাদের দৃষ্টিসীমায় ভেসে ওঠে পঞ্চাশ বছরের পথ-পরিক্রমণ। আমরা যারা ইতিহাসের সাক্ষী, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রক্তরঞ্জিত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রত্যক্ষদর্শী, তারা পঞ্চাশ বছরের পরিক্রমণের সঙ্গে দেখতে পাই রক্তসমুদ্র পেরিয়ে নতুন অভিযাত্রার সূচনা। ফলে কেবল পথরেখা নয়, রক্তরেখাও আমরা দেখি। এই রক্তদাগের সঙ্গে মেশে, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের উপান্তে সপরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতির জনকের রক্ত মিশে যায় একাত্তরের রক্তধারার সঙ্গে। ফলে স্বাধীনতা লাভের জন্য যেমন আমাদের বিপুল মূল্য দিতে হয়েছিল তেমনি স্বাধীনতা-পরবর্তীকালেও অর্জনগুলো বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে জাতির শরীর। তারপরও মুক্তিযুদ্ধের আত্মদান, ইতিহাসের শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছে, সূচনা করেছে নতুন অভিযাত্রা, প্রমাণ করেছে, ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খাড়, তবু মাথা নোয়বার নয়।’ বাঙালি যখনই ফিরেছে ইতিহাসে, মুক্তিযুদ্ধে, জাতিসত্তায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বজনের কল্যাণে, অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ সংহত হয়ে, তখনই খুঁজে পেয়েছে পথ। ইতিহাস যেমন আমাদের প্রেরণা, তেমনি ইতিহাসের কাছে আমরা দায়বদ্ধ, রক্তের ঋণে আমরা আবদ্ধ।
আলোচকবৃন্দ বলেন, মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য বিশ্বের কোনো দেশই বাংলাদেশের মতো এত মূল্য দেয়নি। ভয়াবহ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে, আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর বিশ্বের বুকে সে দেশ অনন্য বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বে সাফল্য অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রোল মডেল। তারা বলেন, রাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারি তাহলে একাত্তরের শহিদদের আত্মদান সফল হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয় তার ধারাবাহিকতাতেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ধনী-গরিব বৈষম্য, দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হলে আমরা অচিরেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন চঞ্চল আশরাফ, হামিম কামাল, চৌধুরী শহীদ কাদের।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, রফিকুল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মৌটুসী পার্থ, সন্দীপন দাশ এবং তানভীর আলম সজীব। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পল্লব সান্যাল (তবলা), মোঃ আরিফ কোরাইশী (অক্টোপ্যাড), বিনোদ রায় দাশ (কী-বোর্ড) এবং শেখ ফয়েজ পুলক (গীটার)।
আগামীকালের অনুষ্ঠান
আগামীকাল ১৩ চৈত্র ১৪২৭/২৭ মার্চ ২০২১ শনিবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১০ম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেনন জালাল ফিরোজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আশফাক হোসেন এবং সাব্বির আহমেদ। সভাপতিত্ব করবেন মোঃ মইনুল কবির।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ