আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/৫ ফাল্গুন ১৪২৬ মঙ্গলবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭-তম দিন। মেলা চলে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১৪৭টি।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাহিদুল হক, জাফর ওয়াজেদ এবং আসলাম সানী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্পদ বড়ুয়া।
প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পঁচাত্তর-উত্তর সময়ে প্রগতি ও সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে নিজেদের গড়ে তোলা একদল তরুণ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সাহসী হয়ে ওঠেন কবিতা লেখার ভেতর দিয়ে। ঢাকা ও রাজশাহী ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। কয়েকজন তরুণ কবি ও রাজনৈতিক কর্মী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এক্ষেত্রে। শোক থেকে শক্তির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে প্রতিবাদী যে সাহিত্যধারাটি সৃষ্টি হয় এই ধারার সাথে কবি মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীর নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওই সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করা যেতো না তখন তাঁরাই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ উপহার দিয়েছেন যৌথ সম্পাদনায়।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বিশুদ্ধ নৈতিকতার অধিকারী বঙ্গবন্ধু নৈতিকতার প্রশ্নে কখনও আপোষ করেন নি। স্বাধীনতার এ মহানায়ক ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট সপরিবারে নিহত হবার পর দেশ এক সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়। এই নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে জাতির মহাশোককে শক্তিতে রূপান্তরের জন্য সেদিন যাঁদের কলম সোচ্চার হয়ে ওঠে; তাঁদের লেখনী সংকলিত হয় গ্রন্থে। একটি জাতির আত্মত্যাগ ও মূল্যবোধের ইতিহাস জানার জন্য এ গ্রন্থ একটি আকরগ্রন্থ হয়ে থাকবে।
গ্রন্থের সম্পাদকদ্বয় বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জাতির জীবনে যে অন্ধকার যুগের সূচনা হয়, সে বিভীষিকাময় সময়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করাও একটি সুকঠিন ব্যাপার। কিন্তু সেই সংকটময় সময়েও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে নিঃস্বার্থভাবে আমরা কাজ করে গেছি। বাংলা একাডেমি থেকে পুনঃর্মুদ্রণের মাধ্যমে এ গ্রন্থটি সত্যিকার অর্থেই মর্যাদার আসন পেল।
সভাপতির বক্তব্যে সম্পদ বড়ুয়া বলেন, জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে কবিরাই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহসী প্রতিবাদ তাই ধ্বনিত হয়েছে কবিদের কলমেই আর সেই প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ গ্রন্থটি।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শামীম আজাদ, মলয় বালা, আফসানা বেগম এবং অরবিন্দ চক্রবর্তী।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক, বিমল গুহ এবং দুলাল সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আঞ্জুমান আরা, ফয়সল আহমেদ এবং মৃন্ময় মিজান। আজ ছিল এ. কে আজাদ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম, শাহনাজ নাসরিন ইলা, অসীম দত্ত, মীর মন্ডল, স্বপ্নীল সজীব, পূরবী বিশ্বাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন মো. সিরাজুল হক (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) এবং বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
স্থাপনা ধারণা প্রদর্শনী : অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে স্থাপনা ধারণা প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল এবারের গ্রন্থমেলার উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্রতিযোগীদের উপস্থাপনকৃত স্থাপনাকর্ম নিয়ে গ্রন্থমেলায় আজ বিকেল ৪:০০টায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট স্থপতি অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
গ্রন্থমেলা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন : আজ সন্ধ্যা ৬:০০টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ এবং স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০/৬ ফাল্গুন ১৪২৬ বুধবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জালাল ফিরোজ রচিত বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ডালেম চন্দ্র বর্মণ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং সাব্বীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ