আজ ১লা বৈশাখ ১৪২৯/১৪ই এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার সকাল ৮:০০টায় একাডেমির রবীন্দ্র-চত্বরে নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বর্ষবরণ-সংগীত, নববর্ষ বক্তৃতা, কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিল্পী মাহমুদ সেলিমের পরিচালনায় বর্ষবরণ সংগীত পরিবেশন করে ‘সংগীত ভবন’-এর শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলা ঋতু ও মাসের নাম-বিচার : লোকশ্রæতি ও আভিধানিক সূত্র শীর্ষক ‘নববর্ষ বক্তৃতা ১৪২৯’ প্রদান করেন লোকসাহিত্য গবেষক ও নাট্যকার
ড. সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। কবিতা পাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান, আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলা একাডেমির প্রয়াত সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী স্মরণে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্বাগত ভাষণে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এবারের নববর্ষ ১৪২৯ আমাদের জাতীয় দুটো বিষয়ের সঙ্গে যুক্তÑ একটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও অন্যটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। পহেলা বৈশাখকে বাঙালি জাতির উত্থান ও বিকাশের সঙ্গে সমন্বিত করে নিতে পারলে এই উদ্যাপন যথার্থই আমাদের আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
ড. সাইমন জাকারিয়া বলেন, বাংলার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ষড়ঋতু ও বারো মাসের মধ্যে গÐিবদ্ধ। লোকায়ত পরিমÐলে প্রাণবন্তঋতুর বৈচিত্র্য ও বারো মাসের পর্ব বিন্যাস কখনো নীরবে, কখনো সরবে উদ্যাপিত হয়। এক্ষেত্রে লোকশ্রæতিতে ঋতু ও মাসের নাম, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি সম্পর্কে নানাবিধ ধারণা প্রচলিত। লোকশ্রæতির আলোকে বাংলা ঋতু ও মাসের নাম-বিচারের সমান্তরালে আভিধানিক সূত্র আলোচনা করলে বাংলা ঋতু ও মাস সম্পর্কে লোকায়ত মানুষের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, নান্দনিক বোধ ও দার্শনিক প্রজ্ঞা প্রত্যক্ষ করা যায়। তিনি বলেন, বাংলা ঋতু ও মাসের নাম-বিচারের ক্ষেত্রে অধ্যাবধি লোকায়ত মানুষের লোকশ্রæতি নির্ভর ভাষ্যকে আমলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু লোকশ্রæতিনির্ভর ভাষ্যকে অনুসরণ করলে এদেশের লোকায়ত মানুষের মৌলিক জ্ঞানকাÐ ও নন্দনবোধ পর্যবেক্ষণ সম্ভব। সেই সঙ্গে বাংলা ঋতু ও মাসের নাম-বিচারে লোকায়ত মানুষ নিজের জীবনাচার, সংস্কৃতি, প্রকৃতি কীভাবে যুক্ত থাকে তা নির্ণয় করা যাবে। অতএব, এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণার সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে সেই বিস্তৃত গবেষণাকর্ম সম্পাদিত হলে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন আরও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সভাপতির ভাষণে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, লোকায়তের শক্তি দিয়ে আমরা সুদূরকাল থেকে পরাভ‚ত করে আসছি সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তিকে। দু’বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কবলে পড়ে আমরা সাড়ম্বরে নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করতে না পারলেও এবার নতুন প্রত্যয় ও অঙ্গীকারে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯; যা বছরব্যাপী আমাদের শুভবাদী উত্থানের বীজমন্ত্র হিসেবে কাজ করবে।
বিসিক ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে ‘বৈশাখী মেলা ১৪২৯’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান
বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা ১৪২৯-এর আয়োজন করা হয়। আজ ১লা বৈশাখ ১৪২৯/১৪ই এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার সকাল ১১:০০টায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিসিক-এর চেয়ারম্যান জনাব মুহঃ মাহবুবর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ এমপি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব জাকিয়া সুলতানা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
ভাষা শহিদ মুক্তমঞ্চে লোককবিতা এবং লোকসংগীত পরিবেশনা
বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগের উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণের ভাষাশহিদ মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় লোককবিতা ও লোকসংগীত পরিবেশনা।
স্বাগত ভাষণ : বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
ভাটকবিতা পরিবেশনা : বাউল রশিদ (ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ)
বাউল গান পরিবেশনা : আবদুর রহমান (দিরাই, সুনামগঞ্জ)
আলেয়া, আবুল বাসার তালুকদার (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)
কবিগান পরিবেশনা : কবিয়াল নির্মল সরকার (সাইটারা, চিলমারী, দিনাজপুর) কবিয়াল যশোদা রানী
যন্ত্রাণুষঙ্গ : হারমোনিয়ামবাদক-মৃন্ময় রায়, দোতারাবাদক-আয়নাল হক, বাঁশিবাদক-প্রত্যুষ বাবু, ঢোলবাদক-গোপেন বৈশ্য এবং করতালবাদক-গোলাপ রায়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন : বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।
মোহাম্মদ আকবর হোসেন
উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)