গত ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯/২৫শে মে ২০২২ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। দিবসটি স্মরণে বাংলা একাডেমি আজ ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯/২৯শে ২০২২ রবিবার বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা, নজরুল পুরস্কার—২০২২ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক লীনা তাপসী খান। প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব
মোঃ আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
শুরুতে সদ্যপ্রয়াত সাহিত্যিক—সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পাদিত বিদ্রোহী : শতবর্ষে শতদৃষ্টি গ্রন্থ উন্মোচন করা হয়।
সূচনা বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, নজরুলের অবিস্মরণীয় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার শতবর্ষ উদ্যাপন এবং বঙ্গবন্ধু কতৃর্ক বাংলাদেশে নজরুলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরণের সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে বিদ্রোহী : শতবর্ষের শতদৃষ্টি শীর্ষক এক ঐতিহাসিক স্মারকগ্রন্থ। এছাড়া বাংলা একাডেমির সেই নজরুল মঞ্চে আমরা বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ভাস্কর চৌধুরী জাহানারা পারভীনের শিল্পভাবনায় বিদ্রোহী কবিতার পূর্ণাঙ্গ রূপ ভাস্কর্য আকারে প্রতিস্থাপন করেছি।
বাংলা একাডেমি এবছর থেকে নজরুলচর্চায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নজরুল পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। এখন থেকে প্রতিবছর নজরুল সাহিত্যের একজন গবেষক/সমালোচক/অনুবাদক/নজরুল সংগীত শিল্পীকে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কারের মূল্যমান ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা। নজরুল পুরস্কার ২০২২—এ ভূষিত হয়েছেন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক—গবেষক, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা—স্মারক এবং পুষ্পস্তবক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিÑ সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বিশেষ অতিথিÑ সংস্কৃতি সচিব, বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং মহাপরিচালক।
কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সংগীতের নবরূপকার শীর্ষক একক বক্তা অধ্যাপক লীনা তাপসী খান বলেন, নজরুল কবিতার মতোই বাংলা গানের ভুবনে নতুন ভোরের বার্তা বয়ে এনেছেন। নজরুল—সংগীত একদিকে যেমন বাণীর বৈচিত্র্যে ভাস্বর, অন্যদিকে অনন্য সব সুরের ধারায় ঋদ্ধ। তিনি বলেন, নজরুল বাংলা গানকে একক প্রচেষ্টায় কালজয়ী উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলের বিদ্রোহ চেতনাকে তাঁর জীবনে অনন্য ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করেছেন। তিনিই নজরুলকে ভারত থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন, জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁর গানকে বাংলাদেশের রণসংগীত নির্বাচন করেছেন। তিনি বলেন, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমাদের সমস্ত অন্যায়—অবিচার—অন্ধত্ব—কুসংস্কার—ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ আবুল মনসুর বলেন, নজরুলের জীবনজুড়ে নানা বাঁধা বিপত্তি এসেছে কিন্তু তিনি সে সব অতিক্রম করে সমগ্র জাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়েছেন, সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নজরুলকে স্মরণ করা মানে বাঙালি জাতিসত্তাকে বিকশিত করা।
নজরুল পুরস্কার—প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের সবার জীবনের সঙ্গে নজরুলের যোগ রয়েছে কারণ নজরুল—পাঠ প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে, অনুপ্রাণিত করে। কিশোর বয়সে নজরুলের পাঠ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, এরপর নজরুলকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে কয়েকটি বই লিখেছি। ক্রমশ বুঝেছি নজরুল কতটা মৌলিক এবং বৃহৎ। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি নজরুলের নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রথমবার আমাকে প্রদান করায় আমি কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত।
সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, নজরুল বাঙালিত্বকে ধারণ করেছেন এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের গান গেয়েছেন। তাঁর জীবন ও সৃষ্টি বিদ্রোহের যে আভায় মণ্ডিত, আমরা যদি আমাদের জীবনে ও কর্মে তা ধারণ করতে পারি তবেই তাঁকে স্মরণ করা সার্থক হবে।
সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম এবং মো. শওকত আলী। নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মাহবুবা রহমান।
মোহাম্মদ আকবর হোসেন
উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)