আজ ৮ই ফাল্গুন ১৪২৭/২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত ১২:৩০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল ১১:০০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২১ এবং কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য-স্মারক তালিকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ : একটি সামাজিক ও যোগাযোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা ২০২১ প্রদান করেন অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা একাডমি ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসে ভাষাশহিদদের স্মরণে ভাষা-আন্দোলন জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা এই জাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ভাষা আন্দোলন বিষয়ক গবেষণা, এর ইতিহাস ও তাৎপর্যকে ভিত্তি করে গত পঁয়ষট্টি বছরে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে স্মরণীয় সব বই ও সংকলন। প্রায় চার দশক ধরে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদ স্মরণে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে চলেছে গোটা বিশ্বের দীর্ঘকালব্যাপ্ত বই উৎসব ‘অমর একুশে বইমেলা’।
একুশে বক্তা অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একাত্তরের ৭ই মার্চ প্রদত্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তট-অতিক্রমী ভাষণ তেজস্বী বক্তৃতার এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। একটি ভাষণ একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে কী দারুণভাবে উৎসাহিত করেছিল- তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ কণ্ঠস্বর সংবলিত এ ভাষণের গুরুত্ব, তাৎপর্য সময়োপযোগিতা বিশ্লেষণ গবেষকদের জন্য এক স্বর্ণখনি।
প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেন, একুশের অঙ্গীকারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও জাতি গঠনে বর্তমান সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে। বঙ্গবন্ধুসহ ভাষা আন্দোলনের বীর শহিদেরা যে ভাষাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ আমরা সে পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ভাষা আন্দোলনের শহিদদের দেখানো পথে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। এই পথে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অসামান্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বের পূর্বেই ১৯৪৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ পত্রিকায় মতামত লিখে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার পক্ষে তাঁর লড়াই শুরু করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব।
কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার-২০২১
‘কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’-এ ভূষিত হয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে কোনো শাখায় সার্বিক অবদানের জন্য একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিককে এ দ্বি-বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য ২,০০,০০০.০০ (দুই লক্ষ) টাকা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আহমদ রফিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় তাঁর পক্ষে বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নূরুন্নাহার খানমের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য দুইলক্ষ টাকার চেক, সম্মাননা-স্মারক ও সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ