২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০/১৬ ফাল্গুন ১৪২৬ শনিবার। মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিন। গ্রন্থমেলা চলে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১৮৪টি এবং এ পর্যন্ত (০২-২৯) নতুন বই এসেছে ৪৯১৯টি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠান :
সন্ধ্যা ৬:৩০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস। আরও বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর, বিকাশ লিমিটেড-এর সি এম ও মীর নওবত আলী এবং ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি, অধিবর্ষের বইমেলার শেষ দিন। গত ২রা ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধন ঘোষণার পর দেখতে দেখতে এই মেলা একটি মাস পেরিয়ে এল। ২০১৯-এর গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনই কিছু ত্রুটি-বি”্যুতি থাকে; অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকব এবং সে প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই আপনাদের সবাইকে সাথে পাব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ এমপি বলেন, আজ যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বেদনা এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি। আপনারা সকলেই জানেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে আয়োজন করা এই গ্রন্থমেলা ছিল তাঁকে উৎসর্গিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। কারণ অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত জ্ঞানের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, গতবার ৩০ দিনে বাংলা একাডেমি মোট ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। এবার ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনে বাংলা একাডেমি ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। আজকের বিক্রির হিসে করলে বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি হবে কমপক্ষে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গতবারের সমগ্র মেলায় ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। গতবার পূর্বের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বই বিক্রি হয়েছিল। এবার ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, ২০১৯ সালের মোট বিক্রির চেয়ে অন্তত ৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। ১৪ ও ২১শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হওয়ায় বিক্রি কম হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সুতরাং ৫ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করলে এবার কমপক্ষে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় প্রকাশিত প্রায় ৫ হাজার বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেককে ১,০০,০০০.০০ টাকার চেক, সনদ, ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্সকে, মঈনুস সুলতান রচিত জোহানেসবার্গের জার্নাল গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত স্মৃতির পথরেখা গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০ এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযান (এক ইউনিট), কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড (২-৪ ইউনিট), বাংলা প্রকাশ (প্যাভেলিয়ন)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রকাশককে ৫০,০০০.০০ টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন :
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ রাতে স্বাধীনতাস্তম্ভ সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে ছিল লেজার শো।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ