আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২০/২রা ফাল্গুন ১৪২৬ শনিবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৪-তম দিন। মেলা চলে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। গ্রন্থমেলায় ছিল আজ শিশুপ্রহর। আজ নতুন বই এসেছে ২০৩টি।
সকাল ১০:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চ‚ড়ান্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, ইয়াকুব আলী খান এবং চন্দনা মজুমদার। এতে ক-বিভাগে ১৫ জন, খ-বিভাগে ১৬ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শাহ্জাহান কিবরিয়া রচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনজীর লিটন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হরিশংকর জলদাস এবং খালিদ মারুফ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন শাহ্জাহান কিবরিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, শহিদ মিনার থেকে স্মৃতিসৌধ। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১। বাঙালি জাতি শিক্ষা নিয়েছে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে জেগে উঠবার। এ চেতনার উৎস আমাদের মাতৃভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। বাঙালির সংগ্রামমুখর ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আমরা পেয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমাদের নিরন্তর পথচলার তিনিই প্রদর্শক, শক্তি ও উদ্দীপনার উৎস। সংগ্রামমুখর জীবনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশকেই গড়ে তোলেননি, বিশ্বরাজনীতিতে বাংলা ও বাঙালিকে নিয়ে গেছেন উচ্চতর আসনে। দেশের নেতা হয়ে উঠেছেন বিশ্বের নেতা। সমগ্র জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে। তিনি বলেন, রচনাশৈলী ও ভাষার বুননে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায় লেখকের নিজস্ব যুক্তি-চিন্তা। এখানে আছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মহানায়কের প্রতি মুগ্ধতা; যা পড়তে পড়তে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর অনুপম প্রতিচ্ছবি।
আলোচকবৃন্দ বলেন, অত্যন্ত সফলভাবে সংক্ষিপ্ত কলেবরে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনকে তুলে ধরা হয়েছে শাহ্জাহান কিবরিয়া রচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রন্থে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর উত্তাল সংগ্রামী জীবনের সঙ্গে লেখক নিজেও যেন সম্পৃক্ত থেকে একের পর এক ঘটনাক্রম বর্ণনা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী চিন্তার অভীষ্ট লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থায় বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার নিগূঢ় ভেঙে মুক্ত করা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমেই তাঁকে আমরা সত্যিকারভাবে জানতে পারবো এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকবে।
গ্রন্থের লেখক বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল সফল রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মানবিক নেতা। দেশের মানুষের প্রতি তিনি গভীর আস্থা রেখেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে বীরের জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। মহান এ নেতা আজ বাঙালি জাতির বাতিঘরের মতো; যে বাতিঘর জাতিকে সামনে এগিয়ে যাবার পথ দেখাবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, শাহ্জাহান কিবরিয়া রচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রন্থে লেখক বঙ্গবন্ধুর জীবনের মূল দিকগুলো ধারাবাহিকভাবে উন্মোচন করেছেন। লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে তিনি বাঙালি জাতিকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিলেন এবং হয়ে উঠলেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পাঠ হয়েছিল দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। জনগণের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সংগ্রামী জননায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আলম তালুকদার, মণিকা চক্রবর্তী, হামীম কামরুল হক এবং তপন পালিত।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মারুফুল ইসলাম, আমিনুর রহমান, শামীম রেজা এবং মাসুদ পথিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজি মাহতাব সুমন, মোঃ সামসুজ্জামান এবং শামীমা নাসরিন মিতু। আজ ছিল গোলাম মোস্তফা খানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্র’, মানজারুল ইসলাম সুইটের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’ ও বিশ্বজিৎ রায়ের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নিবেদন’ এর পরিবেশনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), তুলসী সাহা (তবলা)।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০/৩রা ফাল্গুন ১৪২৬ রবিবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শিহাব সরকার এবং ইসরাইল খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ