মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি ১লা পৌষ ১৪২৬/১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।
সকাল ৮:০০টায় একাডেমির পক্ষ থেকে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের তোমার আপন পতাকা শীর্ষক কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বিজয় : ইতিহাস ও মর্মার্থ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোনো আকস্মিকতার ফল নয় বরং ইতিহাসের এক অনিবার্য ধারাবাহিকতার নাম। হাজার বছরের বিদ্রোহী ও সংগ্রামী পরম্পরায় আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয় অর্জন করেছি। একাত্তরে বিজয়ী বাংলাদেশ আজ নানাক্ষেত্রেই বিস্ময়কর অগ্রগতির অধিকারী। তবু আমাদের যে সব অপূর্ণতা রয়েছে তার অবসানকল্পে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের সত্যের মধ্য দিয়ে আত্মশক্তিতে জাগ্রত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
একক বক্তা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস একাত্তরের বহু পূর্বেই সূচিত হয়েছে। কারণ এই জাতি কখনও স্থায়ীভাবে কিংবা দীর্ঘদিন বিদেশি বশ্যতা স্বীকার করেনি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানান আঙ্গিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেছেন। ৬-দফা এই স্বাধীনতা-ভাবনারই এক বলিষ্ঠ প্রকাশ; মূলত যা ছিল এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতা-কামনার নামান্তর। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনও চলমান। তিনি বলেন, একাত্তর সালে সেক্টর ছিল ১১টি কিন্তু এখন সেক্টর এদেশের প্রতিটি ইঞ্চি। মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা ছিল নির্দিষ্ট কিন্তু এখন সারাদেশের মানুষই মুক্তির যুদ্ধে নিবেদিত যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের চ্যালেঞ্জ ছিল কঠিন, এখন মুক্তির যুদ্ধে বিজয় অর্জনে চ্যালেঞ্জ কঠিনতর। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কঠিনতর চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়ে লাখো শহিদের স্বপ্নকে সার্থক করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করলেও সর্বক্ষেত্রে এখনও বিজয়ী হতে পারিনি। উন্নয়নের পাশাপাশি যেমন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি জাতীয় জীবনের মৌলিক বিষয়গুলোতে আমরা পুরোপুরি ঐক্যমত্যে পৌঁছুতে পারিনি। এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, সকলে মিলে এ দেশকে সার্বিক বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী তিমির নন্দী, সন্দীপন দাস, চম্পা বণিক এবং ফারহানা শিরিন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় কুমার দাস (তবলা), বুলবুল কুমার সাহা (অক্টোপ্যাড), শাহরাজ চৌধুরী তপন (গীটার) এবং মোহাম্মদ বরকত নেওয়াজ (কী-বোর্ড)।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ