মেলায় ছিল আজ শিশুপ্রহর। আজ নতুন বই এসেছে ২৪২টি। শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান
সকাল ১১:০০টায় অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ-সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় আবদুল্লাহ আল সাদ (প্রথম), ঋষিত শীল ধৃতি (দ্বিতীয়), রুহান আবদুল্লাহ (তৃতীয়)। খ-শাখায় মুনতাকা ইসলাম (প্রথম), নুজহাত তাসনীম রূপকথা (দ্বিতীয়), এস. এম. আবতাহী নূর (তৃতীয়)। গ-শাখায় নুরুল আফতাব (প্রথম) আবির রায় চৌধুরী (দ্বিতীয়), আরমান ভূইয়া অর্ক (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় সুমাইতা নুসাইবা (প্রথম), ঋদ্ধ হাসান (দ্বিতীয়), আহ্নাফ বিন জামান (তৃতীয়)। খ-শাখায় যারীন সালসাবিল অর্পা (প্রথম), নওবা তাহিয়া হোসেন (দ্বিতীয়), আব্দুল্লাহ আল হাসান মাহি (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় আফরা আদিলা রিমঝিম (প্রথম), তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় (দ্বিতীয়), ছুওয়াইবা কবির ও সুনিপুণ বড়ুয়া চৌধুরী (তৃতীয়)। খ-শাখায় তানিশা জাহান নরিকা (প্রথম), গার্গী ঘোষ (দ্বিতীয়) এবং ত্বাবীব ফাইরুজ রোদশী (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, প্রতিটি শিশুর ভেতরেই সৃষ্টিশীল প্রতিভা লুকিয়ে আছে। অভিভাবকদের দায়িত্ব হবে শিশুর এই প্রতিভা বিকাশের জন্য সুন্দর ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।
সভাপতির বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমরা যদি আমাদের সন্তানদের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে পারি তাহলে তারা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিকেলের অনুষ্ঠান
বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, গোলাম কুদ্দুছ এবং মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, মুজিব শতবর্ষে বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ, বিচার-বিবেচনার যে ভূমিতে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের নিবিড় ও গভীর পাঠ আমাদের কাম্য তার এক উদাহরণ হতে পারে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে প্রণীত বর্তমান গ্রন্থ। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ’ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থ একান্তভাবে ৭ মার্চের ভাষণ ঘিরে আবর্তিত, তবে প্রায় দেড় দশক জুড়ে নিয়মিত বার্ষিক এই বঙ্গবন্ধু-চর্চায় রয়েছে ধারাবাহিকতা এবং পরিবর্তনময়তা, সেই সাথে নানা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ-পদ্ধতি অনুসরণ করে ৭ মার্চের ভাষণ পর্যালোচনার প্রয়াস। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের উদ্দীপক ভূমিকা নিয়ে যেসব লেখালেখি রয়েছে তা এর সার্থকতারই প্রকাশ।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে আজীবন আপোষহীন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল। শিল্প ও সংস্কৃতির নানা উপাদান সমৃদ্ধ এই অসাধারণ ভাষণ শুধু বাঙালি নয় বিশ্বের যে কোনো ভাষার মানুষকে রোমাঞ্চিত করে। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু তাঁর সামগ্রিক রাজনৈতিক দর্শনকে তুলে ধরেন। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় হাজার বছরের নিষ্পেষণ ও বঞ্চনার শিকার বাঙালি জাতির প্রতিবাদী উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ জাতি গঠনের কাজে চিরদিন আমাদের উজ্জীবিত করে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম এক রাষ্ট্রদর্শন বলা যায়। বাঙালির ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ ভাষণ নিয়ে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ হয়েছে এবং হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধসমূহ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সলিমুল্লাহ খান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাখাওয়াত টিপু এবং চঞ্চল আশরাফ।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, মুহাম্মদ সামাদ, মাশুক চৌধুরী, ফরিদ কবির, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, পিয়াস মজিদ এবং আলতাফ শাহনেওয়াজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মোঃ আনোয়ার হোসেন-এর পরিচালনায় ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’-এর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন সমীর বাউল, দেলোয়ার হোসেন বয়াতী, সুধীর মণ্ডল, শ্যামল কুমার পাল, রাতুল শাহ, আঁখি আলম, বিমল বাউল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় কুমার দাস (তবলা), মো. মামুন (বাঁশি), মো. আজিজুর রহমান (কী-বোর্ড), মো. খোকন ( দোতারা), এবং আবদুস সোবহান (বাংলা ঢোল)।
আগামীকালের অনুষ্ঠান :
আগামীকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/১০ ফাল্গুন ১৪২৬ রবিবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২২-তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হবে মুর্শিদা বিন্তে রহমান রচিত স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু : পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭০-এর নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন মুস্তাফিজ শফি। আলোচনায় অংশ নেবেন আখতার হুসেন, মাহবুব সাদিক এবং আলম খোরশেদ। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ