২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/১৫ ফাল্গুন ১৪২৬ শুক্রবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৭-তম দিন। গ্রন্থমেলা চলে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। আজ নতুন বই এসেছে ৩৪১টি।
বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হয় আবুল কাসেম রচিত বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন : জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন অসীম সাহা। আলোচনায় অংশ নেন কাজী রোজী, এম এম আকাশ এবং নাসিমা আনিস। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন আবুল কাসেম। সভাপতিত্ব করেন আতিউর রহমান।
প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি, কী বিশ্বব্যবস্থা-সর্বক্ষেত্রেই তাঁর বিস্ময়কর দক্ষতা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। তাই দেশ স্বাধীন হবার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি যে দূরদর্শী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করেছিলেন, তাকে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ শুধু স্বাগত জানাননি, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলো কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তাকেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৭২-১৯৭৫ সালের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু কতোটা উচ্চাতায় তুলে এনেছিলেন এবং তিনি বেঁচে থাকলে আরো কতোদূর এগিয়ে নিয়ে যেতেন, তারই একটি পূর্ণাঙ্গ আকরগ্রন্থ আবুল কাসেমের বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তের সমাজ ব্যবস্থায় আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শনের মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন দেশে কৃষি ও শিল্পবিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা সম্ভব। এ কারণে তাঁর পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী এ গ্রন্থ অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ।
গ্রন্থের লেখক বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে উত্থিত উন্নয়নের দর্শনই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন। এ মহান রাজনীতিবিদ কেবল রাষ্ট্রদর্শনই নয়, অর্থনীতি সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন সে বিষয়গুলো এ গ্রন্থে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।
সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান বলেন, রাজনীতির মহান কবি বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথাই ছিল মানুষ এবং মানুষের কল্যাণ। তিনি যেমন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন তেমনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে অর্থনৈতিক নীতিও নির্ধারণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে এ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামরুল হাসান, জাহীদ রেজা নূর, অদিতি ফাল্গুনী এবং মাসুদ পথিক।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, কামাল চৌধুরী, নূহ-উল-আলম লেনিন এবং হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফরিদা পারভীন, সাইদুর রহমান বয়াতি, লীনা তাপসী খান, অদিতি মহসিন এবং সেলিম চৌধুরী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), দৌলতুর রহমান (কী-বোর্ড), এস.এম. রেজা বাবু (বাংলা ঢোল) এবং শেখ জালালউদ্দিন (দোতারা)।
আগামীকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠান :
আগামীকাল ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০/১৬ ফাল্গুন ১৪২৬ শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিন। মেলা চলবে সকাল ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
সন্ধ্যা ৬:৩০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০ এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন :
আগামীকাল রাত ৮:০০টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে রয়েছে লেজার শো।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ