বাংলা একাডেমি আজ ২১শে ভাদ্র ১৪২৬/৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির ফেলো রিজিয়া রহমানের প্রয়াণে স্মরণসভার আয়োজন করে। শুরুতেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্মরণসভায় তাঁর জীবন ও সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা এবং স্মৃতিচারণায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি জাহিদুল হক, লেখক কাজী মদিনা, কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, কবি মাহবুব আজীজ, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান, কথাসাহিত্যিক আবু হেনা মোস্তফা এনাম, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি পিয়াস মজিদ এবং রিজিয়া রহমানের পুত্র আবদুর রহমান প্রমুখ।
স্বরণসভায় উপস্থিত ছিলেন কবি রুবী রহমান, কবি কাজী রোজী, ড. মালেকা বেগম, অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা, কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার, কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান, কথাসাহিত্যিক আফরোজা পারভীন, ড. মাসুদুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, কথাসাহিত্যিক দিলারা মেসবাহ, ড. নুরুল করিম নাসিম, ড. ইসরাইল খান, লেখক দিল মনোয়ারা মনু, রিজিয়া রহমানের পুত্রবধূ শেরিনা তাবাস্সুম প্রমুখ।
একাডেমরি মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রিজিয়া রহমান সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক। আশি বছরের বর্ণাঢ্য সৃজন-জীবনে তিনি গল্প-উপন্যাস-শিশুসাহিত্য-আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথামূলক রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন নতুন অভিমুখ। রিজিয়া রহমানের মতো অমর লেখকের কোনো মৃত্যু নেই, আমাদের সকলের পাঠ ও ভালবাসার মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন নিরবধিকাল।
বক্তারা বলেন, রিজিয়া রহমানের উপন্যাস ও গল্প বিষয়-বৈচিত্র্যে অনন্য। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস থেকে আধুনিক বাংলাদেশের জন্মকথা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের বাস্তবতা, বস্তিবাসী, নির্যাতিতা নারী, চা-শ্রমিক ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জীবন-লড়াই এবং প্রবাসীজীবনের নানা সংকটকে তিনি গল্প-উপন্যাসের বিষয় করে তুলেছেন অসামান্য শিল্পদক্ষতায়। তাঁরা বলেন, রিজিয়া রহমান নিভৃতের মানুষ। তাঁর সমস্ত সরবতা ঘনীভূত হয়েছে লেখনীতে। কাহিনীনির্ভর একমাত্রিক কথাসাহিত্যিক ধারার তিনি অনুসারী ছিলেন না বরং কাব্যময় শিল্পব্যঞ্জনায় তাঁর কথাসাহিত্য উত্তীর্ণ হয়েছে অন্যতর মাত্রায়। উত্তরপ্রজন্মের লেখকদের মাঝে তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর অনশ্বর প্রভাবধারা।
রিজিয়া রহমানের পুত্র আবদুর রহমান বলেন, মা একই সঙ্গে ছিলেন একজন ভাল লেখক এবং একজন ভাল মানুষ। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলÑ সততার শিক্ষা। তিনি সবসময় বলতেন, মানুষের সামনে পথ অনেক কিন্তু গন্তব্য একটাই- মানবিকতা।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রিজিয়া রহমানের উপন্যাসে মানুষের মন থেকে ইতিহাস ও নৃতত্ত্বের গভীরতর অধ্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক মানুষের জীবনকে তাঁর অনেক উপন্যাসের বিষয় করেছেন আবার মধ্যবিত্ত জীবনও উঠে এসেছে সুনিপুণ মমতায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়েছে তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্ম। রিজিয়া রহমানের লেখনশৈলীর সরলতা ও প্রত্যক্ষতা পাঠকের কাছে তাঁর সমকালে যেমন আদৃত হয়েছে বিপুলভাবে তেমনি শিল্পসৃষ্টির নিজস্বতা তাঁকে বহুকাল স্মরণীয় করে রাখবে পাঠকের কাছে।
স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ