বাংলা একাডেমির ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ ১৪২৬/৩রা ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সকাল ১০:০০টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন একাডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলন করেন মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে ৬৪-তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এরপর মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এবং বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’র সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়।
বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির রবীন্দ্রচত্বরে বাংলা একাডেমি ও আমাদের সমাজ শীর্ষক বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতা-২০১৯ প্রদান করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্বাগত ভাষণে একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি বাঙালি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ এবং সাংস্কৃতিক অগ্রসরমানতার প্রতীক প্রতিষ্ঠান।
একক বক্তা অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেরণা নিয়ে বাংলা একাডেমির পরিসর এখন সবদিক দিয়ে প্রশস্ত হয়েছে। প্রকাশনা একাডেমির একটা বড় কাজ। একাডেমি থেকে বহু ধরনের অভিধান প্রকাশিত হয়েছে এবং তার অধিকাংশই বিস্ময়করভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি থেকে সম্পাদিত বাংলা সাহিত্যকর্মের প্রকাশ এর আরেকটি কাজের দিক। লোকসংস্কৃতির নমুনা সংগ্রহ ও সম্পাদনায় একাডেমি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। একাডেমি-আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান সমাজকে সংস্কৃতিপ্রিয় হতে সাহায্য করে। সমাজেও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার একটা ক্ষেত্র থাকতে হবে, তবেই তার মধ্যে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান থেকে সে গ্রহণ করতে সমর্থ হবে। বাংলা একাডেমি নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো নয়। সমাজে তার অবস্থান, সমাজেই তার ভিত্তি। সেই ভিত্তিটা যত শক্ত হয়, উভয়ের ততই মঙ্গল।
সভাপতির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ছয় দশকের পরিক্রমায় বাংলা একাডেমি আজ এক আলোক-বৃক্ষের নাম। বাংলা একাডেমিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এতটাই বিপুল যে আমাদের সীমিত সাধ্যে তা তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা সম্ভব নয় তবু আমরা বাঙালির এই প্রাণের প্রতিষ্ঠানকে জাতির মনন-আকাঙ্ক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম, উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ুদ মান্নান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মোনায়েম সরকার, শিক্ষাবার্তা সম্পাদক এ এন রাশেদা, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, অধ্যাপক হাবিব আর রহমান, ড. ইসরাইল খান প্রমুখ।
সন্ধ্যা ৬:০০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে স্মৃতিচারণ, সংবর্ধনা জ্ঞাপন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্মৃতিচারণে অংশ নেন একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক, সচিব, পরিচালক ও উপপরিচালকবৃন্দ। প্রাক্তন গুণীজনদের একাডেমি পরিবারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।
বাংলা একাডেমি জীবনের স্মৃতিচারণে অংশ নেনÑ একাডেমির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, একাডেমির প্রাক্তন সভাপতি ও মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মনসুর মুসা, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ; প্রাক্তন পরিচালক-ফরহাদ খান, আবদুল হান্নান ঠাকুর, জাকিউল হক, নুরুল ইসলাম, এনায়েত করীম এবং প্রাক্তন উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মজিদ, মুর্শিদুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। তাঁরা বলেন, ‘বাংলা একাডেমি সময় ছিল আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালনের জায়গা ছিল না বরং জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের পবিত্র অঙ্গনে আমরা নিজেদের শ্রম ও মেধা যেমন নিয়োজিত করার সুযোগ পেয়েছি তেমনি ঋদ্ধ হয়েছি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অনির্বাণ আলোয়।’
সুরভিত সন্ধ্যায় শীর্ষক সাংস্কৃতিক পর্বে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি এবং সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ