বাংলা একাডেমি আজ ২৯শে অগ্রহায়ণ ১৪২৬/১৪ই ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকাল ৭:০০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল, মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে একক বক্তৃতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একাত্তরের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সৈয়দ হাসান ইমামের কণ্ঠে কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও আবুল হাসানের মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার কারণ এবং গণহত্যাকারীদের বিচার শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন বিশিষ্ট লেখক শাহরিয়ার কবির। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা একাডেমির সঙ্গে একাত্তরের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তাঁদের প্রায় সকলেই কোনো না কোনোভাবেই একাডেমির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলা একাডেমি শহিদ বুদ্ধজীবীদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে প্রকাশ করেছে শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ, শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ, নবপর্যায়ে পুর্নবিন্যস্ত চারটি খণ্ড স্মৃতি : ১৯৭১ এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রচনাসমগ্র। আমাদের স্মৃতিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা চিরজাগ্রত থাকবেন তাঁদের অগ্রবর্তী চিন্তা এবং সাহসী কর্মে।
একক বক্তা শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে যে নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা মেলা কঠিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ভয়াবহ গণহত্যা হয়েছে, তবে তা ছিল ছয় বছরব্যাপী একাধিক মহাদেশে চলমান যুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যা আর বাংলাদেশে নয় মাসে মাত্র ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। অতিসম্প্রতি আমরা জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন শুরু করলেও একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এখনও সক্ষম হইনি। তিনি বলেন, একাত্তরে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তি পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করলেও সেসব দেশের গণমাধ্যম পাকিস্তানি গণহত্যার সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করে এই গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান এবং এর সুবিধাভোগী চক্র নানাভাবে গণহত্যার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এজন্য যেমন একাত্তরের পাক বর্বর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমাদের তৎপর হতে হবে তেমনি গণহত্যা অস্বীকারকে ‘অপরাধ আইন’-এর আওতায় আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হলেও একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয় সে বছর মার্চে, ডিসেম্বরে তা তীব্র আকার ধারণ করে; নির্মম নৃশংসতায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। দেশের জন্য একাত্তরের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ কখনই বিস্মৃত হবার নয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক পুস্তক প্রদর্শনী ও বিক্রয়
মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমিতে আজ বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক তিনদিনব্যাপী পুস্তক প্রদর্শনী ও বিক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর এবং কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। প্রদর্শনী ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সকাল ১০:০০টা থেকে বিকেল ৫:০০টা পর্যন্ত চলবে।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ