আজ ১৪ই ফাল্গুন ১৪২৮/২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। মেলা চলে দুপুর ২:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ৭২টি।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : বিকাল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি : সত্যজিৎ রায় শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিধান রিবেরু এবং মোস্তাক আহমাদ দীন। সভাপতিত্ব করেন ম. হামিদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, সত্যজিৎ রায় কিশোর বয়স থেকেই চলচ্চিত্রের রসাস্বাদন শুরু করেন। চলচ্চিত্র—বিদ্যায় তিনি শিক্ষিত ও দীক্ষিত হয়েছেন চলচ্চিত্র বিষয়ে গ্রন্থ পাঠ করে। সুখ—দুঃখের পালাবদলে বিবৃত হয়েছে তাঁর চলচ্চিত্রিক গুণমণ্ডিত পথের পাঁচালীর কাহিনি। মানুষ—প্রকৃতি, নিসর্গ—প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাণিকুলের সমন্বিত ভাষ্য পথের পাঁচালী। সত্যজিতের দৃশ্য পরিকল্পনায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো একটি ক্ষুদ্র বা ছোটো অনুষঙ্গ থেকে ক্রমান্বয়ে ব্যাপ্ততর পটভূমে প্রবেশ। শব্দ ও চিত্রকে উপরিতলের রূপ থেকে মুক্ত করে গ্রাফিক্সের সূক্ষ্মতর ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ অভূতপূর্ব সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, মহৎ শিল্পীগণই চলচ্চিত্রে দৃশ্যের পর দৃশ্য জাদুকরি মুহূর্ত তৈরি করতে পারেন। সামগ্রিকভাবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ও অন্যান্য শিল্পকর্ম বিবেচনা করলে দেখা যায় সর্বক্ষেত্রে তিনি যে জাদুময়তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা শিল্পবোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষকেও মন্ত্রমুগ্ধ করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ম. হামিদ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের একজন মহীরুহ সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন সাহিত্য, সংগীতসহ আরো নানা ক্ষেত্রে। বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন যা বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য অশেষ গৌরবের বিষয়।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আমিনুর রহমান সুলতান এবং মোস্তাক আহমাদ দীন।
আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং শিহাব শাহরিয়ার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজি মাহতাব সুমন। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল জাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’—এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া, আমজাদ দেওয়ান, রুশিয়া খানম, ড. বিশ্বজিৎ রায়, মো. দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, সোনিয়া বেগম, মমতা দাসী বাউল এবং মো. আনোয়ার হোসেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা), অরূপ কুমার শীল (দোতারা), মো. হাসান মিয়া (ঢোল), মো. হাসান আলী (বাঁশি)।
বইমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একুশে বইমেলায় আজ বিকেল ৫:০০টায় তাঁকে স্মরণ করা হয়। লেখক—পাঠক—প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভার শুরুতে তাঁর স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তব্য প্রদান করেন বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, কবি আসলাম সানী, কবি মোহন রায়হান, কবি প্রদীপ মিত্র, কবি হাসান আল আবদুল্লাহ, কবি প্রত্যয় জসীম, আকিদুল ইসলাম, হালিমদাদ খান, সাংবাদিক জই মামুন, মোশাররফ হোসেন, প্রকাশক হুমায়ুন কবীর, শায়লা রহমান তিথি, অমর একুশে বইমেলা ২০২২—এর সদস্য—সচিব ড. জালাল আহমেদ এবং হুমায়ুন আজাদের কন্যা মৌলি আজাদ। সভাপতিত্ব করেন আগামী প্রকাশনীর নির্বাহী ওসমান গনি। হুমায়ুন আজাদের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী শিপ্রা রহমান। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাঁর আদর্শে মৌলবাদ—জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ—রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাঁকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
আগামীকালের অনুষ্ঠান
আগামীকাল ১৫ই ফাল্গুন ১৪২৮/২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা চলবে দুপুর ২:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : বিকাল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, শামসুজ্জামান খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা এবং এম আবদুল আলীম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সারওয়ার আলী এবং সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।
সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোহাম্মদ আকবর হোসেন
উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)