মহান ভাষা আন্দোলনের বীর সংগ্রামী, অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’—এর গীতিকার, বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কলাম লেখক, বাংলা একাডেমির ফেলো আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আজ ১৯শে মে ২০২২ যুক্তরাজ্যে প্রয়াত হয়েছেন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর চেতনাদীপ্ত কলম থেকে উৎসারিত অমর একুশের কালশ্রেষ্ঠ গান শহিদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের সুরারোপে দশকের পর দশক ধরে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা দিয়ে চলেছে; অনন্যসাধারণ এই গান কালের সীমা অতিক্রম করে মহাকালকে স্পর্শ করেছে যেন; এই গান একই সঙ্গে মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে আমাদের বিপুলভাবে উজ্জীবিত করেছে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতা শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সচেতন ও সক্রিয় ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি তাঁর ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য এবং স্মৃতিকথা আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। স¤্রাটের ছবি—এর মতো ছোটগল্প, চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান—এর মতো উপন্যাস, পলাশী থেকে ধানমণ্ডি—এর মতো নাটক, ডানপিটে শওকত—এর মতো শিশুসাহিত্য কিংবা ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা—এর মতো কয়েক খণ্ডের স্মৃতিগদ্য আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং শক্তিমান সাহিত্যসত্তার পরিচয় বহন করে।
বঙ্গীয় সাংবাদিকতার ভুবনে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এক কিংবদন্তির নাম। ছাত্রাবস্থায় বরিশালে তাঁর যে সাংবাদিকতা চর্চার সূত্রপাত তা ক্রমশ ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের প্রত্যক্ষদর্শী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রবাসে অবস্থান করে, বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা উপেক্ষা করে আমৃত্যু বাংলা সংবাদপত্রে জনপ্রিয় কলাম রচনা করে গেছেন; যা উত্তরপ্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মনেপ্রাণে একজন বিশ্ববাঙালি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ পাকিস্তানপর্ব থেকে বাংলাদেশপর্ব পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানবমুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় থেকে অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী, আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অক্লান্ত সংগ্রাম করে গেছেন। সর্বোপরি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন নিরলস কলমযোদ্ধা।
বাংলা একাডেমি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছে আন্তরিক সমবেদনা।
মুহম্মদ নূরুল হুদা
মহাপরিচালক