সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি আজ ১৬ই মাঘ ১৪২৬/৩০শে জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল ১১:০০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা পিয়াস মজিদ, বিকাশ লিমিটেড-এর সি এম ও মীর নওবত আলী এবং ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০
আবার এসেছে ফাল্গুন, একুশের মহান প্রহর। মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার মাস ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি মানেই এখন যেন বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলার মাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২০।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান
২রা ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার বিকেল ৩:০০টায় গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে তিনি মেলা পরিদর্শনে যাবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর নতুন বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু রচিত তৃতীয় বই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আমার দেখা নয়াচীন-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গ্রন্থ উন্মোচন করবেন।
মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার বিস্তারিত তথ্য
এবার দ্বিতীয়বারের মতো গ্রন্থমেলার স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়, এ ধারা ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত হবে। গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট; মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমি-সহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৬টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেয়া হয়েছে।
একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।
একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এছাড়া মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে-পশ্চিম পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি স¤প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি স¤প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের মোট ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৩রা ফেব্রæয়ারি থেকে ২৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৫টি নতুন বই নিয়ে আলোচনা করা হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী একুশে বক্তৃতা। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৯ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৪টি বই।
মেলায় নতুন সংযোজন
প্রতিবারের নিয়মিত বিভিন্ন দিক ছাড়া এবার মেলায় অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। যেমন, (১) ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেলার আবেদনপত্র বিতরণ-গ্রহণ এবং অনলাইনে ভাড়ার অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। (২) এবার একটি নতুন থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। গ্রন্থমেলা বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে মেলার আঙ্গিক ও সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে অনেক স্থাপনা করা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন অংশ বঙ্গবন্ধুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে তাঁর জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে ওঠে। (৩) মেলার উভয় অংশে তিনটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। দুটি সোহরাওয়ার্দীতে ও একটি একাডেমি প্রাঙ্গণে। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ এবার বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয়েছে। (৪) শিশু চত্বর বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। শিশুপ্রহরের দিনগুলোতে ‘তারুণ্যের বই’ ব্যানারে শিশু-কিশোরদের বইপাঠে উৎসাহিত করা হবে। (৫) নামাজের ঘর ও টয়লেট ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও উন্নত করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য সম্প্রসারিত নামাজ ঘর থাকবে। (৬) পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাছে একটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকবে। (৭) প্রতি বছরের মতো এবারও হুইল-চেয়ার সেবা থাকবে। তবে গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবী এ-কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এবার হুইল চেয়ারের সংখ্যা বাড়বে। (৮) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট থাকবে।
গ্রন্থমেলার সময়সূচি
গ্রন্থমেলা ২রা থেকে ২৯শে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা এবং ২১শে ফেব্রæয়ারি সকাল ৮:০০টা থেকে রাত ৮:৩০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী
পরিচালক
জনসংযোগ তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ